কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার।কিডনির ক্ষতি করে  যেসব খাবার

প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ মারা যায় কিডনির নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে। মানবদেহের ফুসফুস কিংবা হৃদপিণ্ডের মতোই কিডনির গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু আমরা নিজের অজান্তেই আমাদের কিডনির ক্ষতি করে ফেলছি।

পানি পান করা কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার:

বিভিন্ন কারণে মানুষ আর কিডনির ক্ষতি হয়ে থাকে। এর মধ্যে পদান কারণ হল পর্যাপ্ত পরিমাণ মতো পানি পান না করা। শরীররে পরিপাক প্রক্রিয়ার বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে কিডনির মূল কাজ এবং সেই সাথে  ভারসাম্যও বজায় রাখে কিডনি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই আছে পানির তৃষ্ণা না পেলে পানি পান করে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ মতো পানি পান না করার ফলে বৃক্কের রক্তপ্রবাহ হ্রাস পায় এবং এর ফলে  দূষিত রাসায়নিক জমা হতে থাকে রক্তে।

মাংস কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার :

স্বাদের খাতিরে আমরা অনেক সময় অতিরিক্ত মাংস খেয়ে থাকি। এটা করা আমাদের একদমই ঠিক নয়। সাধারণত আমাদের  মাংস হজম হতে অন্যান্য খাবারের থেকে অনেক সময় বেশি নেয়। এতে করে  করে আমাদের কিডনির জন্য বোঝা হয়ে ওঠে। অনেক সময় কিডনিতে পাথরও জমতে থাকে। আর এসব ইউরিক অ্যাসিডের এর মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।তাই  মাংস অতিরিক্ত খাওয়া একদমই ঠিথি নয়। এবং সেই সাথে  চিপস, ফাস্টফুড, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্রক্রিয়াজাত করন খাবার এবং লবণ জাতিও ও ভাজা খাবারও অনেক ক্ষতিকর। খাবারে অতিরিক্ত প্রোটিন সংযুক্ত কিডনিতে চাপ পড়ে এবং এর দুর্বল কোষগুলোকে ক্ষতি  হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  কিডনি সুরক্ষা রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় প্রাণিজ প্রোটিন না রেখে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন খাবার রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ব্যথানাশক কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার :

সাধারণত একটু মাথাব্যথা, গলা-ব্যথা থেকে শুরু করে শারীরিক কোনো অঙ্গে ব্যথা অনুভব হলেই ব্যথানাশক খাওয়ার অভ্যাস করা। অধিকাংশ খাতে ব্যথানাশকেরই কমবেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এসব জানার পরও আমরা সেইসব ব্যথানাশক সেবন করে থাকি। এসব ব্যথানাশক কিডনিসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য খুবই ক্ষতিকর সাদন করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যথানাশকের ওপর দীর্ঘস্থায়ী রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং কিড কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

লবণ কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার:

প্রতিদিনের খাবারে লবণের পূর্বশর্ত অনেক বেশি। যাইহোক, যখনই বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়, এই মৌলিক খাবারটি কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। লবণের অতিরিক্ত সোডিয়াম কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এই অবস্থার জন্য খাবারে কতটা লবণ গ্রহণ করা যেতে পারে? এখনও, বান্ডিল খাদ্য উৎসের সমস্যা রয়ে গেছে। তাই নিম্নমানের খাবার থেকে দূরে থাকুন। মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণ প্রয়োজন। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে এখনই বেশি লবণ না খেয়ে সাবধান। ১৪০/৯০ এর উপরে একটি সংবহনমূলক কারনে কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায় এবং কিডনি সুস্থ রাখতে, ধারাবাহিকভাবে  ১৩০/৮০ বা তার নিচে রাখার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন

কিডনির দাম কত । কিডনির দাম কত ২০২২

কলা কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার:

কলা আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম ও শক্তির অভাব পূরণ করে। বর্তমানে যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের কলা খাওয়া উচিত নয়। কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। অতএব, সোডিয়াম কম হলেও, একটি মাঝারি কলায় 422 গ্রাম পটাসিয়াম থাকে। যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের কলা থেকে দূরে থাকা উচিত।

এনার্জি ড্রিংকস কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার

 কোমল পানীয় বা অন্যান্য এনার্জি ড্রিংকস খাওয়া এখন রীতি হয়ে গেছে প্রায়। যে কোনো অনুষ্ঠানে কোমল পানীয় না থাকলে কি হয়? আবার অনেকে তৃষ্ণা পেলে পানির পরিবর্তেও এনার্জি ড্রিংকস বা কোমল পানীয় খেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব পানীয় কিডনির ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। প্রতিদিন একজন মানুষের অন্তত ৮ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত ঘামের ক্ষেত্রে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। পরিমাণ মতো পানি পান করলে কিডনিতে পাথর হয় না। ধূমপান ও মদ্যপানের জন্যও কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে।

কমলালেবু কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার

এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা কমলালেবু খায়। অতিরিক্ত এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় আপনার অতিরিক্ত কমলা খাওয়া উচিত নয়। যেহেতু লেবুতে একইভাবে এক টন পটাশিয়াম থাকে। এছাড়াও, এই পটাসিয়াম কিডনিতে সংগ্রহ করে। প্রতিদিন মাত্র 500 মিলিগ্রাম এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড শরীরের জন্য যথেষ্ট। সাধারণ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথরের বিকাশ ঘটায়। তাই এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পরিমাণে খাওয়া উচিত।

কোল্ড ড্রিংকস:

সোডা পানি অথবা কোল্ড ড্রিংকস কিডনির ব্যাপক ক্ষতি করে। অতিরিক্ত চিনি এবং ক্যালরি কিডনিতে চাপ ফেলে এবং শোধন প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়।

উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত ফল:

যেসব ফলে প্রচুর পটাশিয়াম আছে তাও কিডনির ওপর চাপ ফেলে। এমন ফল উপাদেয় হতেই পারে। তবে যতটা সম্ভব এড়িয়ে খাওয়াই ভালো

ড্রাই ফ্রুটস:

সব ধরনের ড্রাই ফ্রুটে পটাশিয়াম পাবেন। তাই ড্রাই ফ্রুটসও বেশি খাওয়া যাবে না।

বাদাম:

বাদাম কে না পছন্দ করে! আমি সারাদিন বাদামের সামান্য গুচ্ছ সিদ্ধ করতে পছন্দ করি। বাদামের মধ্যে কতগুলি ভাল ফিক্সিং রয়েছে তা প্রায় সবাই জানে। তাই সমস্যা হল যে বাদাম শরীরের জন্য ততটা উপকারী যতটা তারা কিডনির জন্য বাদাম যেকোন ধরনের বাদাম কিডনিতে পাথর সংগ্রহের কাজ করে। বাদামের মধ্যে এমন কোনো বাদাম আছে যা কিডনির জন্য অনিরাপদ? বাদামে অক্সালেট নামক খনিজ পদার্থ থাকে। এই খনিজটির ক্ষমতা পাথর তৈরিতে সাহায্য করে যারা এখন পর্যন্ত কিডনিতে পাথর আছে তারা বাদাম খেতে ভুলবেন না! শুধু বাদাম নয়, তাদের জন্য অক্সালেট সমৃদ্ধ সব ধরনের খাদ্যই সরাসরি না! অক্সালেট ধারণ করা বিভিন্ন খাদ্য উৎস হল কালে, পালং শাক, অপরিশোধিত কলা, চা, চকলেট, শাকসবজি এবং বীট ইত্যাদি।

ক্যাফেইন:

কেউ চা বা কেউ এসপ্রেসো! অন্যরা ক্যাফিন-সমৃদ্ধ কোকো চকলেট পছন্দ করে – এত বেশি যে তারা প্রলোভন এড়াতে পারে না। ক্যাফেইন যে প্রধান কাজটি করে তা হ’ল শরীরে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি করে – কিডনির ক্ষমতাকে অনেক দ্রুত করে তোলে। কিডনির এই দ্রুত উপযোগিতা সরাসরি শরীরের পানি ধরে রাখার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। তাই শরীরের তরল ভ্যালেন্সে সমস্যা আছে। একইভাবে, বেশ কিছুদিন ধরে ক্যাফেইন ব্যবহারে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ক্যাফেইন ব্যবহার রক্ত প্রবাহ, উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, আমরা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিতভাবে জানি যে কিডনি রোগীদের জন্য উচ্চ রক্তচাপ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।

দুগ্ধজাত খাবার:

সারাজীবন দুধ আর দুধের বানানো খাবার খেয়ে আসছেন।এইবার থেমে যান।বয়স চল্লিশ হওয়ার পরে আগে নিজের কিডনির যত্ন নেন,পরে আপনার টেস্ট বাড গুলারে আড়াম আয়েশ দিয়েন।

দুধ অথবা দুধের বানানো যে কোন খাবারে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকে।আবার সেই কিডনির পাথর এ আসি। ক্যালসিয়াম এর ক্ষতিকর দিক হলো এটা কিডনির পাথর ফরমেশন এ সাহায্যে করে।

এটা শুধু যে দুগ্ধজাত খাবার সরাসরি কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে তা নয়। এই সংখ্যক খাদ্য বৈচিত্র্যের চর্বি বেশি। চর্বি মানে হার্টের সমস্যা। তাই আবারও কিডনির কথা আসে, যাদের হার্টের সমস্যা আছে- তাদের সম্ভাবনা তৈরি করে কিডনির সমস্যা বাড়তে থাকে।

দুগ্ধজাত সামগ্রীতে অতিরিক্ত পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে। এই ফসফরাস শিল্প সুবিধা শুনলে চমকে যাবেন আমরা কি কারণে দুধ খাই? শরীরে ক্যালসিয়াম বাড়াতে, শরীরের হাড়ের সুস্থতা মোকাবেলা করতে।

যেভাবেই হোক না কেন, ফসফরাসের অত্যধিক পরিমাণ বিপরীত কাজ করে, শরীর থেকে ক্যালসিয়াম টেনে নেয় এবং হাড়ের সময় ক্যালসিয়ামের কেন্দ্রীকরণকে কমিয়ে দেয়! ফলে হাড়গুলো সরু ও দুর্বল হয়ে পড়ে।

আপনার কিডনি যাতে প্রোটিনের অত্যধিক পরিমাণ নষ্ট না হয় তার জন্য, সমস্ত দুগ্ধজাত খাবারের জাত সীমিত করুন যেহেতু দুধে এক টন প্রোটিন থাকে, 240 মিলি দুধে প্রায় 8 গ্রাম প্রোটিন থাকে।

আলু/ টমেটো:

আলু, মিষ্টি আলু তে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। কাচা আলুতে আছে ১১৪ গ্রাম পটাশিয়াম আর একটা মিডিয়াম সাইজের ভাজা অথবা বেক করা আলুতে এই পটাশিয়াম বেড়ে হয় ৫৪১ গ্রাম প্রায়।তবে সুখের ব্যাপার হলো- পটাশিয়াম লিচিং নামক একটা প্রসেস আছে যেটা দিয়ে আপনি চাইলে আলুর এই পটাশিয়াম কমাতে পারেন।জাস্ট আলুগুলারে রান্নার আগে কেটে টুকরো করে পানিতে অন্তত 4 ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবেন৷

টমেটো তেও প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম রয়েছে।এক কাপ টমেটো সসে রয়েছে প্রায় ৯০০ মিগ্রা পটাশিয়াম। কাজেই যারা যে কোন রান্নায় টমেটো দেওয়া বাধ্যতামূলক করে রাখছেন, তারা এইবার টমেটো ব্যাবহার কমায় আনেন।

টমেটোর পরিবর্তে, ক্যাপসিকাম ইউজ বাড়ায় দিতে পারেন।কুচিকুচি করে কাটা রেড ক্যাপসিকাম যে কোন ডিসে টমেটোর ফ্লেবার আনে সহজেই।

আমাদের শেষ কথাঃ

আপনার কিডনি কেমন অবস্থায় আছে এটা আপনার জন্য জানা জরুরি। আপনার কিডনির যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে, সেই রোগ কন্ট্রোল এর জন্য আপনার উচিৎ হবে আপনার ডায়েট প্ল্যান এমনভাবে করা পটাশিয়াম ফসফরাস,এবং সোডিয়াম  ভ্যালেন্স ঠিকঠাক থাকতে পারে।

আমরা উপরে যেসব খাবার এর নাম আলোচনা করলা্ম, এসব খাবার তো এড়িয়ে যাবেন না,পাশাপাশি আপনার ডাক্তার এর কাছে পরামর্শ নিয়ে আপনার ডায়েট চার্ট এমন ভাবে করে নিবেন- যা আপনার জন্য হেলদি এবং আপনার কিডনির জন্যও ভালো হয়।

কিডনির জন্য ভালো ডায়েট ফলো করা কিছুটা কষ্টকর এটা ঠিক, কিন্তু এটাও জানবেন কিডনির যত্ন নেওয়া আপনার কম জরুরী নয়।

কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো এড়িয়ে যাবেন এবং সুষম খাবার খাবেন, ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।

Leave a Comment